পেকুয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহেরনামা নন্দীরপাড়া ষ্টেশনে গভীর রাতে পুলিশ গিয়ে বন্ধ করল বিতর্কিত জমিতে স্থাপনা নির্মাণকাজ। ১১ জানুয়ারী (বুধবার) দিবাগত রাত ২ টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৫ টা পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানসহ ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। ৬০ শতক জমি নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। উভয়পক্ষের মধ্যে দেওয়ানী নিষ্পত্তিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এ সব অবজ্ঞা করে দুবৃর্ত্তরা গভীর রাতে বিরোধীয় স্থানে হানা দেয়। এ সময় বহিরাগত লোকজনসহ ৩০/৪০ জনের দুবৃর্ত্তরা ওই স্থানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে অপরপক্ষের লোকজন বিষয়টি পেকুয়া থানা পুলিশকে অবহিত করেন। এ সময় গভীর রাতে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জসহ পুলিশ জোয়ানরা দ্রæত সেখানে পৌছেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুবৃর্ত্তরা থমকে যান। তবে পুলিশকে গভীর রাতে দেখামাত্র চকরিয়ার ভেওলার বেতুয়াবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত ভাড়াটে আসা লোকজন সটকে পড়ে। পুলিশের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে ওই দুবৃর্ত্তরা সন্ত্রাসী কায়দায় জমি দখলের জন্য নিয়ে আসা লাঠিসোটা, দা, কিরিচ ও অন্যান্য অবৈধ জিনিসপত্র রেখে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ওই স্থান থেকে পেকুয়া থানা পুলিশ একজন বহিরাগত দুবৃর্ত্তকে পুলিশ ভ্যানে কিছুক্ষণ বসিয়েও রাখেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নন্দীরপাড়া ষ্টেশনে বিরোধীয় জায়গা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও মুখোমুখি অবস্থান অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ৬০ শতক জায়গা নিয়ে সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহেরনামা নন্দীরপাড়ায় মৃত মোজাফ্ফর আহমদের পুত্র ফরিদুল ইসলাম গং ও মৃত আহমদ হোসেনের পুত্র মোস্তফা কামাল গংদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সুত্র জানায়, ১৯৮৫ সালের দিকে ওই জমির মধ্যে ৪০ শতক জমি ফরিদুল ইসলামের পিতা মোজাফ্ফর আহমদ খরিদ করেন। মাহফুজুর রহমান নামক ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটি মোজাফ্ফর আহমদ ক্রয় করছিলেন। আহমদ হোসেন মূলত জমিটি মাহফুজুর রহমানকে কবলা সম্পাদন করেন। পরবর্তীতে বায়া দলিল থেকে কবলা নেন মোজাফ্ফর আহমদ। অপরদিকে মোজাফ্ফর আহমদের ভাই ও পেকুয়া সদরের সাবেক ইউপি সদস্য আবু তাহের মেম্বারও একটি দলিলমূলে একই অংশ থেকে জমি কবলা নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় ১৫-২০ বছর জায়গাটি ফরিদুল ইসলাম গং ভোগ করছিলেন। এ দিকে জায়গা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় বিগত ১২/১৩ বছর আগে থেকে। ওই সময় থেকে ৬০ শতক জায়গা অনাবাদী ও পরিত্যক্ত হিসেবে থেকে যায়। জায়গা নিয়ে জেলা দায়রা জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, চকরিয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পৃথক মামলা রুজু আছে। এ ছাড়াও ফরিদুল ইসলাম গং কবলা জালিয়তির বিরুদ্ধে চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করে। এ সব মামলা বিচারাধীন। এ দিকে ঘটনার দিন গভীর রাতে নন্দীরপাড়া ষ্টেশনের নিকটে জায়গাটি জবর দখলসহ ওই স্থানে স্থাপনা নির্মাণের প্রচেষ্টা চালান মৃত আহমদ হোসেনের পুত্র মোস্তফা কামাল গং। তারা বিরোধপূর্ণ স্থানে স্থাপনা নির্মাণ করতে চকরিয়ার ভেওলা, সাহারবিল ও বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন জড়ো করে। এ সময় ফরিদুল ইসলাম গং ও মোস্তফা কামাল গংদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে মারপিটসহ রক্তপাতের আংশকা তৈরী হয়। জবর দখল ঠেকাতে ফরিদুল ইসলাম গং পুলিশকে বিষয়টি রাতে মুঠোফোনে জানান। খবর পেয়ে পেকুয়া থানার ওসি ওমর হায়দার, এস,আই মফিজুল ইসলামসহ পুলিশ সদস্যরা দ্রæত সময়ের মধ্যে সেখানে পৌছেন। পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু ছালেক জানান, রাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল। সেখানে একপক্ষ বাধা দিয়েছিল। পুলিশ এসে নিশ্চিত মারপিট থেকে রক্ষা পেয়েছে। সাবেক ইউপি সদস্য মাহাবুল করিম জানান, আসলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরদারী প্রয়োজন। মামলা আছে এরপরও একটি পক্ষ সেখানে জবর দখল তৎপরতা চালাচ্ছে। পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে হয়। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে তারা রাতভর সেখানে ছিল। ফরিদুল ইসলাম জানান, পুলিশের আন্তরিকতার প্রতি আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ। মানুষের জানমাল ও সম্পদের রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। পুলিশ রাষ্ট্রপক্ষের অতন্দ্র প্রহরী। সেটি আমরা নিষ্টার সাথে প্রমাণ পেয়েছি। পেকুয়া থানার এস,আই মফিজুল ইসলাম জানান, আসলে খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। দু’পক্ষের উত্তেজনা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছি।
Leave a Reply