পেকুয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় দেশ সেরা প্রতিবন্ধী এ্যাওয়ার্ড পেলেন শিক্ষক মাওলানা মো: হাসান রব্বানী। ৩১ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৪ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ২০২২ পালিত হয়েছে। দেশে ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ উপলক্ষে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যারা বিশেষ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখেন ওই সব প্রতিবন্ধীদেরকে জাতীয় সম্মাননা পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ওইদিন দেশ সেরা ৫ জন শ্রেষ্ঠ প্রতিবন্ধীকে পুরষ্কার প্রদান করেন। রাজধানী ঢাকার মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে দেশসেরা প্রতিবন্ধীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্টান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই দিন পেকুয়ার মো: হাসান রব্বানীকে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দেশসেরা প্রতিবন্ধী হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেছেন। সম্মাননা স্মারক, সনদ ও নগদ এককালীন অর্থ প্রদান অনুষ্টানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো: আশরাফ আলী খান খসরু এমপি, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন এমপি, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদান ও বিশেষ অনন্য ভূমিকা থাকায় পেকুয়ার শিক্ষক মাওলানা হাসান রব্বানীকে জাতীয় পর্যায়ের পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। ওই দিন শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তাকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্টানটির তরফ থেকে তাকে জাতীয় পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। মাও: হাসান রব্বানী কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী গ্রামের মাওলানা আবদুল হক (সাবেক এমইউপি) ও মাতা ফরিজা বেগমের কনিষ্ট সন্তান। মা-বাবা দুইজনেই মারা গেছেন। মো: হাসান রব্বানী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৩ বছর পর থেকে তিনি প্রতিবন্ধী। তবে পড়ালেখায় তিনি উচ্চ শিক্ষিত। পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। ফাঁসিয়াখালী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস এবং পটিয়া শাহচান্দ আউলিয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। আলজামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া থেকে দাউরায়ে হাদিস পাস করেন। বর্তমানে একটি বিষয় নিয়ে এমপিল চলমান রয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ স্তরের হয়েও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ছিল। এমনকি হতাশ হননি। অর্জন করেছেন উচ্চ শিক্ষা। পেকুয়ায় শিক্ষা বিস্তারে তার অবদান অনন্য। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে মূল¯্রােতধারায় নিয়ে আসতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। এ মহান ব্রত ও চিত্তের উম্মেষ ঘটিয়ে শিক্ষিত যুবক প্রতিবন্ধী মো: হাসান রব্বানী পেকুয়ায় রাখেন শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা। দীর্ঘ ১ যুগ আগে শুরু করেছিলেন শিক্ষা নিয়ে। বর্তমানে তার প্রচেষ্টা ও যুগান্তকারী উদ্যোগের ফলে পেকুয়ায় প্রতিষ্টিত হয়েছে ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্টান। চার স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে। প্রাথমিক ও নিন্ম মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এ সব প্রতিষ্টান থেকে শিক্ষা লাভ করা হয়। জালিয়াখালী পেকুয়া হেদায়তুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্টিত হয়েছে ২০১০ সালে। একই ভাবে ২০১৮ সালের দিকে প্রতিষ্টিত হয়েছে জালিয়াখালীতে হেদায়তুল উলুম ইসলামিয়া হেফজখানা ও এতিমখানা। ২০১৮ সালে মাধ্যমিক লেভেলের স্কুল প্রতিষ্টা করেন তিনি। স্কুলটির নামকরণ করা আছে পেকুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। এ ছাড়াও ২০২১ সালের দিকে পেকুয়া আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ও তিনি প্রতিষ্টা করেন। ২০২০ সালে পেকুয়ায় শিক্ষা ফাউন্ডেশনও তিনি প্রতিষ্টা করেছেন। পেকুয়া আলিয়া মাদ্রাসা (মাদানী নেছাব) প্রতিষ্টাও করেছেন ২০২২ সালে। এ সব প্রতিষ্টানে প্রায় ২২০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। বাংলা, বিজ্ঞান, ইংরেজী, গণিত, আরবী সাহিত্য, কোরআন, হাদিসসহ আধুনিক শিক্ষায় শত শত শিক্ষার্থী তার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় প্রতিষ্টার জন্যও তিনি সিদ্ধান্তে পৌছেন। এ প্রক্রিয়াকে চুড়ান্ত করতে ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা শাখায় আবেদন পাঠিয়েছেন। এ সব প্রতিষ্টানে পৃথক পৃথক ক্যাম্পাস রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছেন। তার সুদুর প্রসারী উদ্যোগ ও পরিকল্পনার ফলে পেকুয়ায় শিক্ষার মান বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষার গড় হার। ওই মো: হাসান রব্বানীকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্টান জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ জাতীয় সম্মাননা পুরষ্কারে ভূষিত করেছেন। একজন দেশ সেরা সফল প্রতিবন্ধী হিসেবে তাকে জাতীয় পুরষ্কারটি তার হাতে তুলে দেন। জাতীয় অবদানের জন্য তাকে দেশ সেরা ১ম পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
এ দিকে মো: হাসান রব্বানী একজন আত্মনির্ভরশীল যুবক। তার আছে ইচ্ছাশক্তি। উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি দারিদ্র বিমোচন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। স্বনির্ভর ও আত্মকর্মসংস্থান খাতে তিনি একজন উদ্ভাবকও বটে। গবাদিপশু পালন, মৎস্য চাষ, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে তার অবদান রয়েছে। আছে নিজস্ব গবাদিপশুর খামার। মৎস্যঘের,কৃষি উৎপাদন জমি এছাড়াও তিনি লবণ চাষেও বিনিয়োগ করেছেন। পরিশ্রমী যুবক মো: হাসান রব্বানী যেমন শিক্ষাখাতে অবদান রেখেছেন তেমনি দারিদ্র বিমোচন খাতেও উৎপাদন চাষেও তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। ২০০৫ সালে পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে জালিয়াখালী ও মগকাটা পুরাতন জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেন।
Leave a Reply