নিজস্ব প্রতিবেদক,পেকুয়া:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে ছুঁড়াল ইট পাটকেল ছুড়ানো ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪২ শতক বসতভিটার জায়গা নিয়ে দুটি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও এর সন্তানদের মধ্যে বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। জায়গার আধিপত্যবাদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দু’পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারপিটসহ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। থানা কোর্টে মামলা ও অভিযোগ হয়েছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। ২১ জুন বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের নাথপাড়ায় ইট পাটকেল ছুড়ানোর এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ ওই স্থান পরিদর্শন করেছেন। শান্তি শৃংখলা বিঘœ না ঘটাতে পুলিশ উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বারবাকিয়া ইউনিয়নের নাথপাড়ায় ৪২ শতক বসতভিটার জায়গা নিয়ে নাথপাড়ার অনঙ্গ মোহন নাথের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার নাথ গং ও প্রতিবেশী অনিমল কান্তি নাথ গংদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত ১০ বছর ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলমান রয়েছে। এ সম্পর্কিত বিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন। থানায় অভিযোগ হয়েছে একাধিকবার। শালিসি বৈঠক হয়েছে উভয়পক্ষকে নিয়ে। তবে জায়গার বিরোধ এখনো অমিমাংসিত রয়েছে। সম্প্রতি এর জের ধরে দু’পক্ষের বিরোধ আরো অধিক তীব্রতর হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কান্তি নাথ বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তাকে প্রাণনাশ চেষ্টা চালানো হয়। অনিমল কান্তি নাথের স্ত্রী চুমকি বালা দেবীসহ ৩/৪ জনের দুবৃর্ত্তরা বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কান্তি নাথকে দেখামাত্র তাকে হামলার জন্য দুবৃর্ত্তরা ধেয়ে যায়। এ সময় উত্তেজিত লোকজনের মধ্যে লাঠিসোটা দেখতে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা অনিল কান্তি নাথ দ্রæত বাড়িতে ডুকে পড়েন। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে হামলাকারীরা ইট,পাটকেল ছোড়ে। তারা অজিত কুমার নাথের বসতবাড়ির টিনের গেইটে ভাংচুর চালায়। তবে জায়গা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, জায়গার বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিষয়টি সমাধান হচ্ছে না। তবে অজিত কুমার নাথ গংদের পরিবারে ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। অজিত কুমার নাথ, অনিল কুমার নাথ, সুখেন্দু বিকাশ নাথ এরা ৩ ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশ ও মাতৃকার জন্য ওই ৩ ভাই মুক্তিযুদ্ধের স্বশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অপরদিকে অনিমল কুমার নাথের পরিবারেও ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। অনীল কান্তি নাথ, সুশীল কান্তি নাথ ও ধনরঞ্জন নাথসহ ৩ ভাই হলেন অনিমল কুমার নাথ গংদের পরিবারের সন্তান। তারাও দেশকে শত্রæমুক্ত করতে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে বারবাকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপম কান্তি নাথ জানান, আমরা খুবই নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্যে রয়েছি। বাড়িতে থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা। যে কোন সময় হামলা ও প্রাণনাশের ভয় থাকে। শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্মৃতি দেবী বলেন, আমার শাশুড় একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়। এখন অবরুদ্ধ আমরা। খোকন কান্তি নাথের স্ত্রী সঙ্গীতা দেবী জানান, ইট পাটকেল ছুড়ানো হয়েছে। আমার শাশুড় বাড়িতে যে সব সন্তানরা আছেন উনারা সবাই শিক্ষিত। সবাই থাকেন বাইরে। প্রতিপক্ষ এ সুযোগটিকে কাজে নিচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার নাথ জানান, আমরা ৩ ভাই মুক্তিযোদ্ধা। ছেলে সন্তানরা সরকারী চাকুরীজীবি। আমার বাড়িতে সার্বজনীন দুর্গা মন্দির রয়েছে। আমার বাবা ও মাতার নামে একটি সংগঠন রয়েছে। যার নাম অবিনা। এটি পারিবারিক সংগঠন। বসতভিটায় এখন আমরা অবরুদ্ধ। আমাকে প্রাণনাশ চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছি। পুলিশ এসেছিল। তবে এ সব বিষয় নাকচ করে অনিমল কান্তি নাথের স্ত্রী চুমকি বালা দেবী বলেন, এখানো কোন ইট পাটকেল ছোড়ানো হয়নি। সে দিন আমরা ইউএনও এর অফিসে ছিলাম। একটি নন জিআর মামলার শুনানী ছিল। মূলত ওই মামলার জামিন বন্ধ রাখতে ঠিক সেই মুহুর্তে এ ধরনের একটি রং ছিটানো কাল্পনিক ঘটনা সাজানো হয়েছে। অজিত মুক্তিযোদ্ধা বলে সব খানে তার কথা রটে। মিথ্যা বললেও সত্য হয়ে যায়। আমরা গরীব। ধনবল নেই। তাই আজকে এ ভাবে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছে। তারা এসেছিল বাহির থেকে। আর এটি আমার শাশুড়ের জায়গা। পুনর্বাসিত হওয়ার পর এখন আমরাই অত্যাচারী হচ্ছি অজিত কুমারদের নিকট। পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) কানন সরকার জানান, পুলিশ গিয়েছিল। আসলে এটি জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ। একজন এস,আইকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply